আচমকা লকডাউন! একদম হঠাৎ! আরে বাবা মানুষকে একটু সময় তো দিতে হবে। রেসের আগে যেমন বলে, ‘রেডি, স্টেডি’; তারপর ‘গো’! এখানে তো ‘গো’ নেই, একদম ‘গো ব্যাক’!
যা হোক মানতেই হবে। না হলেই পুলিশের প্যাঁদানি। এই বয়সে ওই সব কি আর পোষায়! একদিন অন্ধকারে বেরিয়ে পড়েছিলাম। দু পা এগোতেই হঠাৎ—‘কী দাদু, বয়স তো অনেক হলো, ঘাটের মরা...!’ আরও কী সব বলছিল। বাজখাঁই গলার আওয়াজ শুনেই প্রায় প্যান্টটা ভিজে...!
এর পর অপেক্ষা, শুধু অপেক্ষা। লকআউট ওয়ান। নড়েচড়ে বসলাম। শুরু থেকে শেষ অবধি সব চ্যানেলের চারদিকে ঘোরাঘুরি করলাম। কিন্তু, না খোলেনি।
আবার প্রতীক্ষা। প্রায় দু মাস অতিক্রান্ত! এর পর তো আমার অবস্থা হবে…!
না, এসে গেছে নতুন খবর। লকআউট টু। এইবার আমায় আটকায় কে!
ভালো দিন দেখে এক শুক্রবার সকালবেলা বেরিয়ে পড়লাম। কিন্তু এ কী! আমার বহু পরিচিত পাড়ার প্রতিষ্ঠান বন্ধ কেন? খবর নিয়ে শুনলাম, পরিযায়ী শ্রমিকেরা সব নিজেদের বাসস্থানে চলে গেছে।
কিন্তু আমি তো যে মহৎ কাজে বেরিয়েছি, তাতে সফল হতেই হবে। সুতরাং ‘ফৌজ আগে বাড়’! কিছুটা এগিয়ে দ্বিতীয় গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেখি সেটাও বন্ধ।
মনে পড়ে গেল নিউমার্কেট অঞ্চলের এক প্রতিষ্ঠানের কথা। দু-চারবার রাস্তা ভুল করে পাক খেয়ে অবশেষে গন্তব্যস্থলে পৌঁছালাম।
ভাগ্য কি আজ আমায় চরকিবাজির মতো ঘোরাচ্ছে! কেন যে আজ বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে ‘আজকের দিনটি কেমন যাবে’ পড়ে বের হইনি!
এদিক-ওদিক পাক খেতে খেতে অবশেষে এসে, ‘ইউরেকা’! পেয়ে গেলাম। দরজায় পুশ করে ভেতরে ঢুকতেই আমাকে চারদিক দিয়ে বিশুদ্ধ করা হলো। না, গঙ্গাজল ছিটিয়ে নয়। আজকাল কী যেন নতুন এসেছে, ডিসইনফেকট্যান্ট স্প্রে করে।
চুপচাপ চেয়ারে চোখ বন্ধ করে বসে থাকলাম। যাক এত দিন পর মাথার বোঝা নামিয়ে কী আরাম যে হয়েছে!