বিশ্ব পরিব্রাজক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১২ সালের ২৭ অক্টোবর প্রথমবার যখন আমেরিকায় পৌঁছান, তত দিনে ইংরেজি ভাষায় গীতাঞ্জলি ছাপা হয়ে আসেনি। ব্যক্তিগত উদ্যোগের সাড়ে পাঁচ মাস দীর্ঘ সেই যাত্রা শেষ করে কবি লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দেন ১৯১৩ সালের ১২ এপ্রিল। এর ঠিক ছয় মাস পর প্রথম অশ্বেতাঙ্গ হিসেবে রবীন্দ্রনাথের নোবেলপ্রাপ্তি আমেরিকায় তাঁকে ক্রমে জনপ্রিয়তার চূড়ায় নিয়ে যায়। ১৯১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো আটলান্টিকপারের সেই দেশটিতে তিনি পৌঁছালে তাঁকে নিয়ে বিপুল সংবর্ধনার বহু সংবাদ দেশটির পত্রপত্রিকায় ব্যাপকভাবে লক্ষ করা যায়। বিখ্যাত সব দৈনিক পত্রিকার পৃষ্ঠাজুড়ে রবীন্দ্রনাথের ছবিসহ সাক্ষাৎকারও প্রকাশিত হয়।
তবে তাঁকে নিয়ে মারাত্মক বিরূপ যে ঘটনাটি ঘটে, সেটির মূল নায়ক তাঁর দেশের স্বাধীনতাকামী কিছু মানুষ। ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি সানফ্রান্সিসকোতে আসার পর ৫ অক্টোবর অনাকাঙ্ক্ষিত সেই ঘটনার সংবাদ ছিল এমন ‘Tagore Visitor Hit by Hindus’, ‘Plot to Slay Sir Rabindranath Tagore Nipped in S.F’ ইত্যাদি। সেই ঘটনা দ্রুত নিষ্পত্তি হলেও স্বদেশি আন্দোলনকারীদের কর্মকাণ্ড এত সুদূরপ্রসারী ছিল, যার পরিণতিতে আমেরিকার আদালত প্রত্যক্ষ করে রোমহর্ষক এক ঘটনা। ১৯১৮ সালের ২৩ এপ্রিল হিন্দু-জার্মান ষড়যন্ত্র মামলার রায় ঘোষণার দিন কোর্ট প্রাঙ্গণে ভারতীয় স্বদেশি নেতা উর্দুভাষী গদর পত্রিকার সম্পাদক রামচন্দ্র নিহত হন তাঁরই আরেক সহমতাবলম্বী রাম সিংয়ের পিস্তলের গুলিতে। ভারতের স্বাধীনতার জন্য আমেরিকার মাটিতে বসে বিপ্লবের বীজ বপনকারী সেই সব মানুষের বিচার চলাকালে জবানবন্দির একপর্যায়ে আমেরিকার পত্রিকায় ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে একটি চাঞ্চল্যকর সংবাদ শিরোনাম ছিল ‘Tagore Named with Japanese at plot Trial’, যার খেসারত দিতে রবীন্দ্রনাথকে সন্দেহাতীতভাবে যথেষ্ট কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল।
এ কথা এখন সবার জানা যে আমেরিকার সানফ্রান্সিসকো শহরে বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে জীবিকার প্রয়োজনে আবাস গড়েছিলেন বিপুলসংখ্যক ভারতীয়, যাঁদের অধিকাংশ ছিলেন পাঞ্জাবি ও শিখ। একসময় সেখানে পৌঁছান লালা হরদয়াল (১৮৮৪-১৯৩৯)। লেলান্ড স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় দর্শন ও সংস্কৃত ভাষার অধ্যাপক হরদয়াল চেষ্টা চালান ভারতীয়দের সংগঠিত করতে। ১৯১১ সালে শুরু সেই প্রচেষ্টার দুই বছরের মাথায় ‘প্যাসিফিক কোস্ট হিন্দুস্তানি অ্যাসোসিয়েশন’-এ রূপ নেয়, যার মুখপত্র হলো গদর। ১ নভেম্বর শুরু গদর-এর সম্পাদক ছিলেন হরদয়াল নিজেই। উর্দু ভাষায় প্রকাশিত আরবি ‘গদর’ শব্দের অর্থ বিদ্রোহ। পরবর্তী সময়ে সেই পত্রিকার নাম বদলে রাখা হয় হিন্দুস্তান গদর। গদর-এর কোষাগারে অর্থ আসত জার্মানি থেকে। পুলিশি ঝামেলায় পড়ে হরদয়াল নিজেই একসময় আমেরিকা ছাড়তে বাধ্য হন। আর তখন গদর পার্টির দায়িত্ব এসে পড়ে রামচন্দ্র ভরদ্বাজের ওপর।
প্রথমবার আমেরিকা সফরের সময় হরদয়ালের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের দেখা হয়নি, যদিও কবি তাঁকে চিনতেন। তবে দেখা যাঁর সঙ্গে হয়েছিল, তিনি হলেন বসন্ত কুমার রায়। পাঠকের নিশ্চয়ই জানা আছে যে এই বসন্ত কুমারই হলেন ইংরেজি ভাষায় লেখা প্রথম রবি-জীবনীর লেখক। মানবেন্দ্রনাথ রায়ের (১৮৮৭-১৯৫৫) স্মৃতিকথা থেকে জানা যায়, বসন্ত কুমার যদিও বিপ্লবী ছিলেন না, কিন্তু অন্যান্য ভারতীয় বিপ্লবী যেমন ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত (১৮৮০-১৯৬১) এবং তারকনাথ দাসের (১৮৮৪-১৯৫৮) সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। অন্য যে আরেকজন আমেরিকা-প্রবাসী মেধাবী সাহিত্যিকের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের যোগাযোগের কথা সকলের জানা, তিনি হলেন বহু গ্রন্থের লেখক ধন গোপাল মুখোপাধ্যায় (১৮৯০-১৯৩৬), যিনি নিজে ছিলেন বিপ্লবী এবং যাঁর সঙ্গে বিপ্লবীদের সবার পরিচয় ছিল।
১৯১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর কবি আমেরিকার সিয়াটল বন্দরে গিয়ে নামেন। ৩০ সেপ্টেম্বর পৌঁছান সানফ্রান্সিসকোতে। আমেরিকায় যাওয়ার পথে জাপান ভ্রমণকালে কট্টর জাতীয়তাবাদের যে নিন্দা কবি করেছিলেন, তা প্রবাসী ভারতীয়দের নিকট সুখপ্রদ হয়নি। ফলে শুরু হয় রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে গদর পার্টির দ্বন্দ্ব। আমেরিকায় কবিকে স্বাগত জানাতে পারেননি গদর পার্টি ও এর মুখপত্র হিন্দুস্তান গদর-এর সম্পাদক রামচন্দ্র। তাঁদের বক্তব্য হলো, কবির আমেরিকা যাত্রার উদ্দেশ্য হিন্দু বিপ্লবকে মন্থর করা। ২ অক্টোবর সেন্ট ফ্রান্সিস হোটেলে রবীন্দ্রনাথ এক বক্তৃতায় বলেন যে মোগল সাম্রাজ্য এবং অন্য সব শাসকবর্গের তুলনায় ব্রিটিশ শাসক শ্রেয়। তিনি এমনও বলেন যে ‘ভারত স্বায়ত্তশাসনের জন্য প্রস্তুত নয়’। তাঁর এমন সব কথাবার্তা যেন আগুনে ঘি ঢালে। গদর পার্টি আপ্রাণ হলো রবীন্দ্রনাথের বক্তৃতা বন্ধ করার ব্যাপারে। খালসা দিওয়ান সোসাইটির প্রধান অধ্যাপক বিষেণ সিং মাট্টু তাঁর দুই সঙ্গী উমরাও সিং ও পারদাম সিংকে নিয়ে হোটেলে রবীন্দ্রনাথকে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে গেলে রামচন্দ্রের দুই সহযোগী এক হাত কাটা জিওয়ান সিং ও এইচ সিং হাতেশি তাঁদের বাধা দেন। বচসার একপর্যায়ে বিষেণ সিংয়ের পাগড়ি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। বাধাদানকারীদের পুলিশ গ্রেপ্তার করলে তাঁদের পরিচয় স্পষ্ট হয়। বিচারে যে অর্থদণ্ড হয় তাঁদের, সেটি পরিশোধ করেন রামচন্দ্র। ঘটনাটি সাধারণ হলেও সংবাদপত্রে এর পরিণামটি ছিল অসাধারণ। ‘Tagore Visitor Hit by Hindus’ থেকে শুরু করে ‘Plot Against Hindu Poet’ বহু কিছু হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ শহর থেকে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেছেন এমন সংবাদও ছাপা হয়েছিল ‘Hindu Poet Flees from Reported Assassination Plot’।
১৯১৭ সালের ৮ মার্চ New York Tribune লিখেছিল ‘U. S Jury Sifting India Plot to Get Von Igel’s Papers’। অভিযুক্ত হিসেবে যাঁদের নাম ছাপা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন চন্দ্রকান্ত চক্রবর্তী (১৮৭৭-১৯৭১)। বলা হয়েছে, চন্দ্র নিয়মিত রামচন্দ্রের নিকট সংবাদ পাঠাতেন। দীর্ঘ সংবাদটির নিচে আরও একটি সম্পর্কযুক্ত সংবাদ হলো ‘German Plots to Aid Revolutions in India known at Washington’। একই তারিখে The day book পত্রিকাটি সংবাদ ছেপেছিল ‘Sun Francisco Hindus plant Revolution’ শিরোনামে। বলা হয়েছিল, দুই মাস তদন্ত শেষে প্রমাণিত হয়েছে যে সানফ্রান্সিসকোতে বসবাসরত হিন্দুদের ইন্ধনে চিনের সহযোগিতায় ভারতজুড়ে ব্রিটিশ উপনিবেশ দখলের ষড়যন্ত্র চলছে।
এক মাস পর ৮ এপ্রিল Daily Missourian পত্রিকায় সংবাদ ছাপা হয় রামচন্দ্রকে আটক করা নিয়ে। বলা হয়েছে, মোট নয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে ভারতের ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানোর পরিকল্পনায় দোষী আটক ব্যক্তিরা বিচারের মুখোমুখি হবেন। তিন মাস পর ১৩ জুলাই Ogden Standard পত্রিকায় এ বিষয়েও সংবাদের শিরোনাম ছিল ‘HINDU CONSPIRATOR BROUGHT/TO OGDEN AND HIS HEARING/SET BY JUDGE W. H. REEDER’। যে ষড়যন্ত্রকারী এখানে আটক তাঁর নাম মুনশি রাম বা মুঙ্গা রাম। মুঙ্গা রাম আদালতে তাঁর যুক্ত থাকার কথা অস্বীকার করেন। তাঁর বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ হলো, তিনি হিন্দু বিপ্লবী নেতা রামচন্দ্রের নির্দেশে প্রথমে লস অ্যাঞ্জেলেস ও পরে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় ষড়যন্ত্র বিস্তারের কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
১৯১৮ সালের ১০ জানুয়ারি নিউইয়র্ক ট্রিবিউন ‘Hindu Plot Witness Brings in Braun’ শিরোনামে লেখে চিন থেকে ১০ লাখ রাইফেল ক্রয়ের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে আটককৃতদের একজনের সে সংবাদ। ২৫ ফেব্রুয়ারিতে একই পত্রিকায় ‘Goldman Worked with German Spy, Letters Indicate’ শিরোনামের সংবাদে ‘Letters Made Public’ উপশিরোনামে জানানো হয়েছে, সানফ্রান্সিসকো থেকে প্রকাশিত Ghadr নামের যে পত্রিকাটির বর্তমান সম্পাদক রামচন্দ্র, সেটির প্রতিষ্ঠাতা হরদয়াল। আরও জানানো হয়, ১৯১৪ সাল থেকে বার্লিনে রয়েছেন এবং জার্মান বিদেশি দূতাবাসের সহযোগিতায় বিদ্রোহ সংগঠনের চেষ্টা করছেন। পত্রিকাটি ২৬ অক্টোবর তারিখে লেখা একটি চিঠি ছেপে দিয়েছে, যাতে হরদয়াল জার্মানিতে বিপ্লবের সহযোগিতার জন্য লোক চেয়েছেন। পরের মাসে ২৫ ফেব্রুয়ারি El Paso Herald পত্রিকাটি ব্যানার হেডিং করে লেখে ‘LANCING TO TESTIFY IN HINDU PLOT’। যদিও সংবাদটি ডান দিকে মাত্র দুই কলামে ছাপা হয়েছিল। প্রতিবেদনের একটি উপশিরোনাম ছিল ‘Tagore’s Testimony’। তখন জাপান ভ্রমণরত রবীন্দ্রনাথ ‘Testimony’ করতে গিয়ে আমেরিকায় যাবেন স্বীকারোক্তিতে এমন কথা বলেছিলেন রামচন্দ্র। আর এভাবেই ক্রমে রবীন্দ্রনাথের নামটি হিন্দু-জার্মান ষড়যন্ত্র মামলা বা গদর বিদ্রোহের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে।
দুই দিন পরেই ২৮ ফেব্রুয়ারির সংবাদে বোমা ফাটল যেন। নিউইয়র্ক ট্রিবিউন লিখল: ‘Tagore Named with Japanese at Plot Trial’। উপশিরোনাম হিসেবে এল ‘Ocuma and Terauchi Figure in Hindu Correspondence’ উল্লেখ করে বলা হলো যে সরকার কর্তৃক গোপন নথিপত্রের ভিত্তিতে এটি দাবি করা হয় যে জাপানের প্রধানমন্ত্রী তেরাউচি, তার আগের প্রধানমন্ত্রী কাউন্ট ওকুমা এবং রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ভারতীয় ষড়যন্ত্রীদের যোগাযোগ রয়েছে। দীর্ঘ সেই সংবাদের একটি ছায়া সংবাদ প্রকাশিত হয় ১ মার্চ Interior Journal পত্রিকায়। ১৯ মার্চ ‘Two German Plots Exposed’ শিরোনামের সংবাদের একটি অংশ হলো ‘Two Arrests in Second Gmp’। আটককৃতদের মধ্যে শৈলেন্দ্রনাথ ঘোষের নাম এসেছে। ২৮ মার্চে দুটি সংবাদ ছাপা হয় ‘Hindu Plotters had Two Marked for Death Here এবং Hindu on Trial Gets many Death Threats, He Admits to Police’ শিরোনামে, এখানে ‘He’ হলেন চন্দ্রকে চক্রবর্তী। Evening Public Ledger ২ এপ্রিল তারিখে ছেপেছে ‘US INDICTS AMERICAN GIRLS AND FIVE HINDUS’। নাম এসেছে পুলিন বি বোস, তারকনাথ দাস, যদু গোপাল মুখার্জি ও ভগবান সিংয়ের। ২৪ এপ্রিল নিউইয়র্ক ট্রিবিউন-এ প্রকাশিত ‘Hindu Kills and Skilled at Plot Trail’ শিরোনামটি চমকে দেওয়ার মতো। ১৩ এপ্রিল ছিল ষড়যন্ত্র মামলার রায় ঘোষণার দিন। ঘোষণার পর যখন দর্শকেরা বেরোচ্ছিলেন এবং অভিযুক্তদের মধ্যে রামচন্দ্র অস্থিরভাবে বিচরণ করছিলেন, রাম সিং পিস্তল বের করে রামচন্দ্রকে গুলি করেন এবং এতে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর মৃত্যু হয়, যদিও কোর্টে দায়িত্বরত অস্ত্র বহনকারী কর্মকর্তা (মার্শাল) মুহূর্তেই পিস্তলের গুলিতে ভূপতিত করেন রাম সিংকে। ভয়াবহ উত্তেজনা সৃষ্টিকারী দিনটি নিয়ে ২৮ এপ্রিল নিউইয়র্ক ট্রিবিউন পৃষ্ঠাজুড়ে সংবাদ ছাপে। শিরোনাম দেয় HINDU PAWNS LOST IN KAISER’S GAME OF EMPIRE। প্রতিবেদকের নাম L. J. D. BEKKER। আধা পৃষ্ঠাজুড়ে সংবাদের মাঝে ছয়টি ছবি ছিল, যাঁদের একটি হলো রামচন্দ্রের, আরেকটি রামচন্দ্রের হত্যাকারী রাম সিংয়ের। ২৩ এপ্রিল সানফ্রান্সিসকো কোর্টে রামচন্দ্রের হত্যাকাণ্ডসহ পুরো বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ এই প্রতিবেদন।
আমরা দেখেছি, ১৯১৮ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে এসে হিন্দু-জার্মান ষড়যন্ত্র মামলায় রবীন্দ্রনাথের নামটি যুক্ত হয়ে যায়। যুক্ত করার পেছনের মানুষটি ছিলেন চন্দ্রকান্ত। ভারতে বিপ্লব চালনার জন্য তিনি জার্মানি থেকে আর্থিক সহায়তা পেতেন। ১৯১৬ সালের ২১ নভেম্বর এক চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন ‘Rabindranath has come at our suggestion and saw Count Okuma, Baron Shrimpei Goto, Massaburo Suzuki, Marquis Yamanuchi, Count Terauchi and others. Terauchi is favourable and others are sympathetic. ’ 10 Jan 1917 পরবর্তীতে ১৯১৭ সালে গদর পার্টি বার্লিন কমিটিকে তিনি লিখেছিলেন যে ‘Rabindranath Tagore thinks, if he now goes to Sweden, he may be suspected and his usefulness curtailed. His intention is to hasten home and do whatever he can.... We have given him 12,000 dollars. ’। চিঠি দুটির অংশ দুটি আমরা প্রশান্তকুমার পালের রবিজীবনীর সপ্তম খণ্ড থেকে (পৃ.৩৪২) উত্কলন করলাম। নিজের নাম যুক্ত হওয়ার কথা রবীন্দ্রনাথের কাছে পৌঁছাতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। ১১ মে দিল্লি থেকে অ্যান্ড্রুজ ফিরে আসেন এই সংবাদ নিয়ে। যদিও তত দিনে মামলাটির রায় ঘোষিত হয়ে গেছে। ১১ মে তারিখে রবীন্দ্রনাথ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসনের (১৮৫৬-১৯২৪) নিকট একটি চিঠি পাঠান। চিঠিটি পৌঁছাতে দেরি হবে বিবেচনা করে একটি টেলিগ্রামও পাঠানো হয়েছিল তাঁকে। টেলিগ্রামে লেখা ছিল ‘Newspapers received concerning conspiracy trial San Francisco wherein prosecution counsel implicated me. I claim from you and your country protection against such lying calumny. ’ অনেক দর-কষাকষির পর ১৭ জুন ভারতবর্ষের ভাইসরয় এবং গভর্নর জেনারেল লর্ড চেমসফোর্ডের ব্যক্তিগত সচিব রবীন্দ্রনাথকে একটি সহমর্মিতামূলক টেলিগ্রাম পাঠান, যাতে লেখা ছিল যে আমেরিকার সংবাদপত্রে প্রকাশিত ‘Unwarrantable Prominence’-এর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের নাম যুক্ত থাকায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন যে এই সংবাদের কোনো ভিত্তি নেই। তিনি এ-ও বলেছেন যে রবীন্দ্রনাথ প্রয়োজন মনে করলে এই চিঠির কপি ব্যবহার করতে পারেন।
১৯১৭ সালের ২০ নভেম্বর শুরু সেই মামলার ৩২ জন আসামির মধ্যে ২৯ জন কম-বেশি মেয়াদে সাজা পান। কোর্ট প্রাঙ্গণে মৃত্যু হয় দুজনের। আর একজন বেকসুর খালাস পান। যদিও মামলার রায় হলেও রবীন্দ্রনাথ মুক্তি পাননি তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ থেকে। রায় ঘোষণার চার মাস পর ১৬ আগস্ট কোর্টের বরাত দিয়ে Ocean Standard পত্রিকাটি লেখে ‘Woman Attorney Exonerates Tagore’। জানানো হয়, ষড়যন্ত্রে রবীন্দ্রনাথের উল্লেখ ছিল একটি দুর্ঘটনা মাত্র। পত্রিকাটির ভাষায়: ‘Tagore was mentioned incidentally in the letters of the conspirators as having favoured a change in the Indian government. There was no evidence of any sort against him and any connection he may have had with the conspirators was entirely innocent of wrong doing’. ১৯১৮ সালের ১৭ আগস্ট প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম ‘Tagore Maintains Loyalty/Offers Letter From Indian/Governor to Disprove Plot’।
ষড়যন্ত্র মামলায় নিজের নাম যুক্ত হয়ে পত্র-পত্রিকায় ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হওয়ায় ১৯১৮ সালে রবীন্দ্রনাথ পূর্বপরিকল্পিত আমেরিকা সফর বাতিল করতে বাধ্য হন। তৃতীয়বার যখন তিনি আমেরিকায় যাত্রা করলেন, তত দিনে দুই বছর পার হয়ে গেছে। ১৯২০ সালের ২৮ অক্টোবর পুনশ্চ তাঁর আমেরিকা পদার্পণ। কিন্তু ইতিমধ্যে বদলে গেছে অনেক কিছু। ১৯১৬ সালে তাঁকে নিয়ে মাতামাতিতে ব্যস্ত যে আমেরিকা তিনি রেখে এসেছিলেন, জীবনের বাকি ২০ বছরেও আমেরিকা থেকে সেই উষ্ণতা তাঁর আর ফিরে আসেনি। আর ১৯২৯ সালে কানাডা থেকে যখন আমেরিকায় রওনা হওয়ার পথে, তাঁর পাসপোর্ট হারিয়ে যাওয়ায় নোবেল বিজয়ী কবিকে চূড়ান্ত অপমান করতেও সামান্য দ্বিধা করা হয়নি।
(শিরোনাম: ২৮ এপ্রিল ১৯১৮ সালে প্রকাশিত নিউইয়র্ক ট্রিবিউন-এ ১৩ এপ্রিল ষড়যন্ত্র মামলার রায় ঘোষণার পরের ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত সংবাদ, যাতে রাম সিংয়ের পিস্তলের গুলিতে রামচন্দ্র এবং কোর্টে দায়িত্বরত অস্ত্র বহনকারী কর্মকর্তার (মার্শাল) পিস্তলের গুলিতে নিহত রাম সিংয়ের ছবিসহ পৃষ্ঠাব্যাপী সংবাদ প্রকাশিত হয়।)