২০০১ সালে ১৮ দশমিক ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বিয়ানীবাজার পৌরসভা গঠিত হলেও আইনি জটিলতায় একটানা ১৬ বছর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। অবশেষে গত ২৫ এপ্রিল সেই কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু দুজন কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগে নির্বাচন কমিশন একটি কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করে পুনরায় ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। ৮ মে বাতিল ওই কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণ হয়। এতে বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবদুস শুকুর। এদিন রাতেই প্রথম আলোর মুখোমুখি হন নবনির্বাচিত মেয়র। তিনি পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিয়ানীবাজার সাংস্কৃতিক কমান্ড নামের একটি গণসাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিও।
প্রথম আলো: পৌরসভা প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পর নির্বাচন, আর জনরায়ে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হলেন। কেমন অনভূতি?
আবদুস শুকুর: শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ ও আমাকে নির্বাচিত করায় পৌরবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বিয়ানীবাজার পৌরসভা প্রতিষ্ঠা হয়েছিল বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের একান্ত প্রচেষ্টায়। তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে পৌরসভা প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভোট হচ্ছিল না। আমরা ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সক্রিয় ছিলাম। কিন্তু পৌরসভা স্থাপনের পর আইনি জটিলতা সৃষ্টি করে একটি চক্র জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির সেবা থেকে পৌরবাসীকে প্রায় ১৬ বছর বঞ্চিত করে রেখেছিল। এ বঞ্চনার আবসান হলো, এটাই আমার অনুভূতি। এটা শুধু আমার নয়, জনরায়ে অংশ নেওয়া পৌরবাসীরও হচ্ছে। আমি তাঁদের ভোটে জয়ী প্রতিনিধি হিসেবে তাঁদের আনন্দ-অনুভূতিতে শামিল হয়েছি মাত্র।
প্রথম আলো: তাহলে কি ১৬ বছর পর নির্বাচন হওয়া এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি পাওয়াটাই মুখ্য হয়ে উঠেছে এখন?
আবদুস শুকুর: অবশ্যই এটি মুখ্য। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে আমি, আমার দল ও প্রতীক পৌর নাগরিকদের আস্থায় পরিণত হয়েছে।
প্রথম আলো: এত দিন কেন নির্বাচন হয়নি?
আবদুস শুকুর: এই প্রশ্ন শুধু আমার নয়, সাধারণ ভোটারদেরও ছিল। প্রায় ২৫ হাজার ভোটার একটা দমবন্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হয়েছেন। কিন্তু এখনো শঙ্কা আছে। ২৫ এপ্রিল ভোট গ্রহণ শেষে একটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত হওয়া এবং পরবর্তী সময়ে আবার ভোট গ্রহণের ১২ দিনের মধ্যে মামলা দিয়ে আটকানোর চেষ্টা হয়েছে। আজকের (৮ মে) ফলাফল বাতিলের জন্যও মামলাবাজেরা এককাট্টা হয়েছেন শুনেছি। কিন্তু জনরায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এসব টিকবে না, কিন্তু আশঙ্কা উড়িয়েও দেওয়া যায় না। এ আশঙ্কার পরিসমাপ্তি হবে ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ পাওয়া এবং নির্বাচিত মেয়র হিসেবে আমার শপথ গ্রহণ করে দায়িত্ব নেওয়ার পর।
প্রথম আলো: পৌর মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করে কোন কাজটি আগে বা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করবেন?
আবদুস শুকুর: দেখুন, এত দিন নামেই পৌরসভা ছিল। চলছে ইউনিয়নের মতো করে। তাই আমি শুরুতে শহরে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করব। এখন যেহেতু বর্ষা সামনে, তাই জলাবদ্ধতা সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানে কাজ করব। এ অবস্থা মোকাবিলা করে আমার মেয়াদের মধ্যে বিয়ানীবাজার পৌর শহরকে একটি আদর্শ শহরে পরিণত করার চেষ্টা শুরু থেকেই করে যাব। কারণ, বিয়ানীবাজার শুধু সিলেট বিভাগের নয়, বিশ্বজুড়ে এর নাম রয়েছে।
প্রথম আলো: সেটা কেমন?
আবদুস শুকুর: কারণ প্রবাসী। বিয়ানীবাজারে নাড়ি আছে, এমন প্রবাসী যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর অনেক দেশে আছেন। আমি বিয়ানীবাজারকে প্রবাসীদের নীড়ের শহর মনে করি। প্রবাসীরা যাতে দেশে ফিরে এসে তাঁদের নীড়কে তৃপ্তিসহকারে দেখেন, সেই চেষ্টা থাকবে।
প্রথম আলো: প্রবাসীদের নীড়ের শহর গড়তে প্রবাসীদের সহায়তা থাকবে কি?
আবদুস শুকুর: অবশ্যই। আপনারা খেয়াল করলে দেখবেন, বিয়ানীবাজারে অসংখ্য রাস্তাঘাট, প্রতিষ্ঠান আছে, যেগুলো প্রবাসীদের অর্থসহায়তায় হয়েছে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আমি সরকারের সহায়তার পাশাপাশি প্রবাসীদের সহায়তা নেব। আগে ব্যক্তিগতভাবে প্রবাসীরা জনসেবামূলক যে কাজগুলো করতেন, সেগুলো এখন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হবে।
প্রথম আলো: প্রবাসীদের আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে বিশেষ কী উদ্যোগ নেবেন?
আবদুস শুকুর: বিশেষ কোনো উদ্যোগ নিতে হবে না। ওই যে বললাম নাড়ির টান। সেখান থেকেই হবে। বলতে পারেন, ভোটে বড় নিয়ামক ছিলেন প্রবাসীরা। তাই আমার নির্বাচিত হওয়ার পেছনে প্রবাসীদেরও বড় অবদান আছে। প্রবাসীদের প্রতিও আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ, দায়িত্ব পালনে তাঁদের কাছে সর্বাত্মক সহযোগিতাও চাই।
প্রথম আলো: তাহলে পৌরবাসী ছাড়াও প্রবাসী বিয়ানীবাজারবাসীর প্রতিও আপনার বিশেষ দায়বদ্ধতা আছে?
আবদুস শুকুর: এ দায়বদ্ধতা বলতে পারেন সমান সমান। ১৬ বছর ভোট হচ্ছিল না, সে ক্ষেত্রে আমরা আন্দোলন করছিলাম। নির্বাচন আদায় করার ক্ষেত্রে প্রবাসীদের অবদান আছে। তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমর্থন জুগিয়েছেন। ভোটের সময় যখন বাড়ি বাড়ি গিয়েছি, তখনো শুনেছি প্রবাসীদের মাধ্যমে ভোটাররা তাঁদের সুচিন্তিত মতামত নিয়ে অপেক্ষা করছেন। এমনও দেখেছি, আমি একটি ঘরে গেছি, কিন্তু ভোটার আমাকে কিছু না বলে ফোন দিয়েছেন লন্ডন কিংবা আমেরিকায়। সেখানকার মতামত নিয়ে আমাকে এ রকম বলেছেন, ‘অয় রেবা অউ মাত্র ফোন দিছি, তোমার মাতই মতরা তাঁরা। পরিবর্তন চাইন, সুন্দর পরিবেশ চাইন তাঁরা...।’ এই ‘তাঁরা’ হচ্ছেন প্রবাসীরা। সুতরাং, পৌরবাসীর জন্য কিছু করা মানে প্রবাসীদের মন রক্ষা করা একই বিষয়। আমার দল, সরকারও বিষয়টি অনুধাবন করেছে।