>করোনাভাইরাস পাল্টে দিয়েছে আমাদের জীবনের বাস্তবতা। দেশ-বিদেশের পাঠকেরা এখানে লিখছেন তাঁদের এ সময়ের আনন্দ-বেদনাভরা দিনযাপনের মানবিক কাহিনি। আপনিও লিখুন। পাঠকের আরও লেখা দেখুন প্রথম আলো অনলাইনে। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]
চশমা পরি প্রায় এক যুগ ধরে। কানাডাতে এসেছি ২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবর। এর পর মাত্র একবার বাংলাদেশে গিয়েছি। কানাডায় বসে অনেক কিছু মিস করি বাংলাদেশের। বাংলাদেশে অনেক কিছুই সহজে ও সস্তায় পাওয়া যায় যা এই দেশে কল্পনাও করা যায় না। কানাডার চিকিৎসা বিনা মূল্যে। চাকরির সুবাদে অফিসে ইনসুরেন্স থাকার কারণে আমার এবং পরিবারের সদস্যদের প্রায় সব ওষুুধের দাম ৮০ ভাগ কাভার করে। দাঁতের চিকিৎসা ও ৮০ ভাগ কাভার করে ইনসুরেন্স কোম্পানি। কিন্তু বিপত্তি ঘটে চোখের চশমা এবং চোখের ডাক্তারের ক্ষেত্রে। যা আমার জন্য কষ্টের।
প্রতি ২ বছরে মাত্র এক বার চোখের ডাক্তারের কাছে ইনসুরেন্সের টাকায় দেখতে পারি আমি এবং আমার পরিবার। আর আমার সারাজীবনে মাত্র এক বার চশমার জন্য মাত্র ২০০ ডলার ক্লেম করতে পারব। এই ইনসুরেন্স কোম্পানিগুলো যেন ভেবেই নিয়েছে মানুষ একটি চশমা দিয়ে জীবন পার করে দিবে।
এর বাইরে এই দেশে চশমা কিনতে কিংবা চোখের ডাক্তার দেখতে পারব আমি, তবে নিজের টাকায়। সেখানে আমার মতো কম আয়ের মানুষের জন্য মহা বিপত্তি। ডাক্তার না হয় দুই বছরে এক বার দেখলে হয়। এক পিস চশমা দিয়ে সারা জীবন চলে কীভাবে?
আমার চোখে কোনো এক অদৃশ্য কারণে একটি চশমা বেশি দিন টিকে না। হয় ভেঙে যায় না হয় হারিয়ে ফেলি। এক পিস ভালমানের চশমা কিনতে গেলে কানাডায় প্রায় ২০০ ডলার খরচ হয়ে যায়।
কানাডাতে আসার পর থেকে প্রায় ২০-২৫ পিস চশমা আমি হারিয়েছি বা ভেঙেছি। যে বার বাংলাদেশে গিয়েছিলাম তখন ৭ পিস নিয়ে এসেছিলাম। বাকি গুলো কানাডা থেকে কেউ বাংলাদেশে গেলে আমার মা তাদের হাতে পাঠিয়ে দিতেন। গত সামারে এসেছিলেন আমার সাবেক সহকর্মী ডাক্তার মার্লিনা রায়। তার আগের বছর ২০১৮ সালে এসেছিল স্কুল বন্ধু এনায়েত কবির। আসার আগে তারা জানতে চেয়ে ছিল কিছু আনা লাগবে কি না। আমার একটা ই চাওয়া ছিল চশমা। তারা এনেছিলেন ৩ টি করে।
এখন চলছে করোনা কাল। সারা পৃথিবীর যোগাযোগ বন্ধ। এখন আমাদের কানাডার উইনিপেগ শহর থেকে কেউ আর বাংলাদেশ যেতে পারছে না। কেউ আসতেও পারছে না। আমার স্টকে আছে আর মাত্র ২ টি ভালো চশমা আর ২ টি ভাঙা চশমা। ভালো চশমার ১ টি রেখে দিয়েছি আর একটি কাজে গেলে পরি। আর ভাঙা চশমা দুটির ১ টি বাসায় ব্যবহার করি পড়া-লেখার কাজে। অন্য টি থাকে গাড়ীতে। গাড়ী চালানোর সময় বিশেষ দরকার পড়ে। আমি নিশ্চিত যত যত্ন করে রাখি না কেন ভাল ২ সেট চশমা দিয়ে আমি বেশি হলে ৪-৫ মাস চালাতে পারব। তার পর বাধ্য হয়ে ২০০ ডলার দিয়ে একটি চশমা কিনতে হবে যা বাংলাদেশি টাকায় বারো হাজার টাকা।
আশায় বুক বেঁধে আছি, কেটে যাক করোনা মহামারী। স্বাভাবিক হোক সব কিছু। চলাচল হোক প্লেন। এখানকার মানুষ আবার আগের মতো যাক তার প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশে। আর আমার মা তাদের কারো হাতে আমার জন্য পাঠিয়ে দিক কয়েক সেট চশমা। মায়ের হাতের ছোঁয়া লাগা সেই চশমা পরে আমি আমার স্বাভাবিক কাজে ফিরে যাব।